Friday, August 4, 2017

Vengeance

Now I’m more than a quarter of
A century old,
And I often think I’ve wasted
All my gold;
Wish I had got a different, some
Other mould,
If only my tendencies to the right
Direction rolled, 
But that should be fine as long as I
Be bold
To declare that revenge’s been sweet –
Though cold –
As you’ve robbed me off my innocence,
You told,
I have robbed you off yours,
Behold!

That busts up the deal; glad I’m 
Not yet sold.


Saturday, April 29, 2017

রস

বাচ্যার্থেই থাইকা কাজ নাই,
বাচ্চারাও তা বুঝতে পারে
ভাব বিনা তুমি ক্যামনে ধরবা
রসবতীরে কাইব্যাধারে?

ক্যামনে ফুটাবা আন্ধার ঘরে
কাইব্য-প্রকাশ ঝাড়বাতি-খান?
ক্যামনে আঁকবা কালো মেঝে জুড়ে
আল্পনা ভাল্‌ ভাল্‌ কয়খান?  

বাচ্যার্থেই আটকা থাইকো না
হোথায় শুধুই ধাঁচাখানা আছে;
দেহপটখানা সম্বল কইরা
বাঁচামরা ছাড়া রাস্তাও আছে।      

Sunday, April 9, 2017

কামমোহিতং

আমি তো ভালোই ঘুমোচ্ছিলাম
মড়ার মতো বিছানায় প'ড়ে প'ড়ে --
জাগিয়ে গেলে তুমি।

তুমি তো এখন অন্য কারো কোলে
নিদ্রা গিয়েছো, কিংবা নিয়েছো গিলে
পারোও বটে তুমি!

আমি উচাটন, বেড়াই ছুটে ছুটে
বিভোর বাতাস ফুসফুসেতে পুরে;
উড়ছো জানি তুমিও।

হাওয়ায় মেলেছি আমরা যে যার পাখনা
সবটা চুলোয় যায় যদি, তো যাক্‌ না
সব আছে, তবু যৌথ হ'ল না।

মিথুন বনতে ক্রৌঞ্চ ব'নে গেলাম
আমরা যে যার নিজের বনে এলাম
ব্যাধ ছিলো, তবু বিদ্ধ হ'ল না।

হে বাল্মীকি, হাহাকার পেলে শুনতে?
কান্না এবং দীর্ঘশ্বাসকে গুনতে?
কাব্যে এসেই মিটবে যত দেনা?
   

Friday, March 31, 2017

খেলা ভাঙার গান



যদি দেখি,

কান্নাহাসির সমস্ত পাট শেষ

যদি দেখি,

রাত্রিদিনের চলন নির্নিমেষ

তবে যেন

ঘুমের কোলে যাই,

গিয়ে ছাই

সব জ্বালা জুড়াই, 

এবং 

জেগে উঠেই পুড়িয়ে ফেলি  

মিথ্যে যত আবেশ !

উটকোবি

উটকো কবি হুড়কো তুলে বেবাক বাজে বকে
তাই নিয়ে ফের ভক্তবৃন্দ আড্ডা জমায় রকে।
উটকোর পাশে ছুটকো এসে কিচিরমিচির করে,
FIR আর হুমকি জুটিয়ে শহীদ-মালা পরে।
শহীদ-শহীদ জমলে খেলা নতুন বেদী গজায়;
বেদীর টঙে চ'ড়ে বেগম নতুন অ্যাওয়ার্ড সাজায়!
তারপরেতে বসন-ভূষণ ভীষণ ভীষণ ভারি
সাজিয়ে নিয়ে দুলকি চালে ফেরেন তাঁরা বাড়ি।
বাড়ি ফিরেই গল্প লেখেন, পদ্য ফাঁদেন আবার
কমিশনের টাকায় মেটান বউ-বাচ্চার আব্দার।
এমনি করেই বাজে বকা কেবল বেড়ে চলে,
সভ্যতাটির জাত ভেসে যায়, চোখ ভেসে যায় জলে।
    

Tuesday, February 28, 2017

গুরুজির জয়

যদি না জোগায় শব্দ মুখে,
শত্রু-সমরে কি ঘোর দুখে
বিপদে-আপদে উপপ্লবে
ঘন-দুর্যোগ জমে ওঠে যবে
করিস্‌ নে শেষ তোর জয়গান
নত না হয় ও-ললাট মহান
মৃদঙ্গে তোল্‌ প্রচণ্ড তাল
গর্জিয়ে বল্‌ সৎ-শ্রী-অকাল!    

Sunday, February 26, 2017

ফেরিওয়ালা

তার কাজ ফুরিয়ে গেছিলো।
কাজ ফুরিয়ে গিয়েছিলো তার
দিনান্তে, অন্য বাসনায়;
টান পড়েছিলো ভাণ্ডারে আর
চোখের দেখার ক্ষণে।

এ-পথে মেয়েটি আসছিলো না।
দেখছিলো না নেড়ে-চেড়ে আর
সাজানো পসরা-ডালি
যা বেচে বেচে কেটে যাবে তার
ঝাপ্‌সা জীবনখানি।

ব্যথাতুর দেহ ঠেলে উঠছিলো।

কার ব্যথার আর কে খোঁজ রাখে --
কেন সে আসে না? দু'দিন ভেবেছে;
ভেবে দু'রাতের ঘুম উড়িয়েছে
তারপরে ঠেলে নিয়ে গেছে তার
পসরা ঠেলার গাড়ি।   

Sunday, February 12, 2017

That Moment When You Feel Angry (but cannot do much about it)

Some people made me angry today. No, wait – that’s not true – from neither end. I should have really said that a LOT of people have been making me feel angry since quite some time now. Who are these people? And what in God’s name have they done to make me feel SO angry, after all? And since when? These are the three burning, urgent questions that are presently not letting you sit up (or just lie still) properly while you’re reading this. Let me fancy that you are shifting positions, or maybe rolling from one end of your bed to another, all because me – your beloved author (who they say does not exist, who they say is already dead and pushing lilies – or polluting the river Ganges – I am a Hindu, after all!) feels angry; like really angry; really, really angry. I would like to say that again: I feel very angry. Don’t get bored yet by all these repetitions of similar-sounding phrases. You see, I’m trying to make a point here. I am talking to you, my dear reader, from the other end of this page which unfolds at a time that is a bit tilted away from your here and now, towards the past. Believe me: that’s the only thing that separates you from me – time. You are reading this at your own lazy or slippery moment which will come at a later time than the one which I am in – at the moment of this act of writing. This is no bigger a deal than the separation that a caller has to afford when (s)he is making a phone call from the other end of the line. (S)he uses words from a language to articulate her/his fine feelings – well, I’m doing the same stuff here, expressing my very own boiling feelings through words borrowed from a language. In other words, both of us are doing a verbal exercise. It involves the use of words; it involves employing language – that finest of all human inventions – to communicate with a fellow human being. And such a real blessing it feels like, to be able to make another person – another sentient human being – understand how you think, how you feel, what you want! Praised be Vāg-devī, the Goddess of Speech, for she came upon my tongue, she resided within my vocal cord (and often on my fingertips which are typing these words now) and blessed me with the unique ability – among all the members of this big animal/botanical family – to so efficiently and effectively articulate my desires and emotions! Never does a human child feel so powerless in her/his whole life other than the time when (s)he cannot form a word, even if (s)he can perfectly find it from her/his father’s familiar mushy vocabulary, simply because (s)he cannot bend a few muscles the way they should be to utter that word, and as a result gives out a loud cry of protestation – even breaks into tears – oh, baby! That’s the reason why I am counting my blessings presently, and you should, too! You better count the numerous ways which you take for granted a little too much and a lot too often.      

But enough on the subject of human inventions and the Goddess’s intervention in bestowing them with the tools to innovate with. Let’s now get back to the much-debated (and long dubbed cold) topic of the Death of the Author. Do I sound like a dead person, now? Here, lend me some attention on this page. Do I sound like some dead cuneiform codex that you cannot make head nor tale of? Do not worry too much; I’ll probably turn into one when I’ve run my course in time – probably a few thousand years down the line (or worse, a few hundred, given the ever-increasing acceleration that Change has gathered in our times). But so will a species of dog – one that you find perfectly normal and classily pedigreed to pet in your own apartment – it will turn into a fossil in a matter of a few thousand years or more, a something that doesn’t look very different from a cuneiform codex to be honest. Profoundly sad (just pretending!), but true. So, rather than thinking too much about the future, where we may not be fortunate enough to cohabit, let us invest our time and energy on this mortal lifetime. I talk to you, I directly address you while doing so, you are listening to me and you understand me fairly well. I am using a tool – a language – to do so effectively, so that you don’t miss out on either the major themes or the finer details of my communiqué. Let us call this language English for the time being. Within the common user-interface that the English language is providing us, I can attempt to communicate that anger which I was ranting about since the beginning of this article (or letter, if you may) and it is quite expected that you will at least get a decent understanding of my situation – if not realize all of it. I will draw a very important distinction between ‘understanding’ and ‘realization’: understanding may or may not arouse an immediate response in you; but realizing my situation definitely will – it will compel you to feel empathy for me (if you are not outright evil, that is) and you shall feel as if you simply cannot do without doing something about the situation. Now I better remind you one more time that I feel very angry. I really do. And I cannot do much about it, except for talking about it. So what do I do? Well, of course, I tell you about it. At certain times it would not even matter if you are interested in listening to me, or even have got the time to listen to me – I will still do it somehow – just because you, another human, is readily available before me.                                      


(continued)      

Thursday, January 5, 2017

বাংলাদেশের সাহিত্য ও তুলনামূলক সাহিত্য – সাংস্কৃতিক সেন্সরশিপ এবং কিছু সম্ভাবনা

বাংলাদেশের সাহিত্য ও তুলনামূলক সাহিত্য – সাংস্কৃতিক সেন্সরশিপ এবং কিছু সম্ভাবনা  

[সারাংশঃ সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের নামাঙ্কিত মিউজিক কলেজটি ধ্বংস করা এবং শিল্পকলা একাডেমীর উপর আক্রমণ নেমে আসা প্রসঙ্গে সেদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের সূত্র ধরে মতাদর্শগত পার্থক্যের কথা মনে আসে। সে পার্থক্য রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মতের বিভিন্নতার কারণেই হয়তো বা। এখন তুলনামূলক সাহিত্যের পাঠ-পদ্ধতি দিয়ে সেদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে সাংস্কৃতিক পাঠ (বা টেক্সট) হিসেবে ধরে নিয়ে যদি পড়তে বসি, তাহলে প্রথম যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, তা হলঃ বাংলাদেশ তো মূলত একটি ভাষায় কথা বলা দেশ। তাহলে কীসের তুলনা? কার সাথেই বা তুলনা? এই পত্রে এ দুটি প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর খোঁজার সূত্রেই চলে আসবে একই ভাষায় কথা বলা এই দেশেও কীভাবে একাধিক দেশ বিরাজ করে, সেই গল্প। এই একাধিক দেশের সহাবস্থান এবং যুযুধান অবস্থা কি তবে মতাদর্শগত বিরোধেরই ফসল? নাকি এর কারণ লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক অসাম্যের মধ্যে? এই বিরোধ/অসাম্য কি কোনোভাবে তৈরি করে দিচ্ছে এক ভাষার মধ্যে অঞ্চল এবং শ্রেণীভেদগত বিভিন্ন পরিসর? তারা একে অপরের সাপেক্ষে কেমনভাবে অবস্থান করছে – অনুভূমিক নাকি উল্লম্ব রেখায়? এইসব প্রশ্ন তোলার মধ্যে দিয়ে আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ, সেন্সরশিপ এবং বহুমত-সহিষ্ণুতার নিরিখে বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে শুরু ক’রে বর্তমান বাংলাদেশের (বা “বাংলাদেশগুলির”-একাধিক বাংলাদেশের) সর্বশেষ অবস্থান, তার সাহিত্যে-সংস্কৃতিতে।]  



দুটি ঘটনার কথা বলে আলোচনায় ঢুকবো। ঘটনাদুটির মধ্যে ব্যবধান রয়েছে প্রায় এক শতাব্দীর। তবুও কী আশ্চর্য মিল তাদের মধ্যে! প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯২০-র দশকে, ঢাকায়। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর বার্ষিক মুখপত্রের ভূমিকা নিয়ে ঐ সময় প্রকাশ পেতে শুরু করে শিখা পত্রিকা, ১৯২৭ সাল থেকে মুসলিম সাহিত্য সমাজের এই আন্দোলন-চেষ্টা ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে চিহ্নিত হবার কারণ—এঁদের স্লোগানই ছিলঃ “বুদ্ধির মুক্তি” বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা, আপসহীন যুক্তিবাদী এবং ব্রিটিশ-শাসনাধীন ভারতবর্ষে প্রাদেশিক বাংলা সরকারের পাঠ্যবই-সংক্রান্ত কমিটির এককালীন সম্পাদক কাজী আব্দুল ওদুদ এই পত্রিকায় তাঁর ‘মুক্ত চিন্তা ও যুক্তিভিত্তিক’ বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসমাজে প্রচারিত হবার কারণে ঢাকার নবাবের পরিবার কর্তৃক নিগৃহীত হয়ে ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং কলকাতায় স্থায়ী বসবাস করতে শুরু করেন। অথচ তিনি নিজেকে একইসঙ্গে আস্তিক ও বুদ্ধির মুক্তিবাদী বলে ঘোষণা করেছিলেন, কোরানের বঙ্গানুবাদ করবার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর ঝুলিতে, এবং তিনি ধর্মের বিরোধিতা করেননি।

দ্বিতীয় ঘটনাটি সমসাময়িক, এবং সমসময়ের নিজস্ব চরিত্র অনুযায়ী অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে এই একই চরিত্রের ঘটনার বহু প্রকাশ আমাদের পক্ষে স্মরণে আনা খুব কষ্টসাপেক্ষ নয়অতীতের ঘটনাবলী একে অপরের থেকে বিছিন্ন, একক, একলা হতে শুরু করে – যত তাদের সাথে আমাদের দুরত্ব বাড়তে থাকে। সমসময়ের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার কথা নয়। এই সময়টা আমাদের ভেতরে-বাইরে তার চির-উপস্থিতির খবরটা আমাদের জানান দেয় ঘটনাবলীর বহুত্বে—বিশেষ ক’রে গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর এই জোয়ারবেলায় তবুও একটা ঘটনার কথাই বলছিঃ সবকটির আখ্যান এখানে এনে ফেললে মহাভারত হয়ে যাবে, তা এই পরিসরে বাঞ্ছনীয় নয়, এবং তার দরকারও নেই। এর সঙ্গে তুলনীয় বাকি ঘটনাগুলি, আমি নিশ্চিত, আপনারা নিজের নিজের চেতনায় ঝালিয়ে নেবেন আরেকবার, এই পাঠের অবসরে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়; সেখানে উস্তাদ বাবা আলাউদ্দিন খানের নামাঙ্কিত মিউজিক কলেজটি ধ্বংস করেছে একটি মাদ্রাসার ছাত্রেরা। খবরে প্রকাশ, সেদেশের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করা হচ্ছে, তিনি বলছেন এমন ঘটনা মাদ্রাসার ছাত্রেরা ঘটিয়েছে তার কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের সংস্কৃতি, এদেশের মূলভাবটিকে ধ্বংস করতে চায়।

একটি দেশের মূলভাব কি হতে পারে, বা আদৌ সেরকম কিছু থাকতে পারে কিনা, সে নিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বিতর্ক চলতে পারে – বিশেষ করে সে বিতর্কের পরিসর যদি হয় এই তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের মতো কোনো লিবেরাল আর্টস বিভাগ। সেখানে এ প্রশ্ন অন্তত কেউ না কেউ তুলবেন ব’লে নিশ্চিত হওয়াই যায়, যে যখন মাত্র দু’জন মানুষের মধ্যে মতের ও মনের সম্পূর্ণ মিল হওয়া এক অর্থে অসম্ভব, তাহলে কী ক’রে এমনটা আশা করা যায় যে ষোল কোটি মানুষের দেশে মূলভাবটি কি সেই প্রশ্নে মতভেদ ও তা থেকে বিরোধিতা মাথা তুলবে না। তবে এই পত্রে সে প্রশ্নের অবতারণা করাটা আমার মূল উদ্দেশ্য নয়। এখানে উদ্দেশ্য বলে যদি কিছু থাকে, তবে তা হ’ল—এই যে শতাব্দিব্যাপী সাংস্কৃতিক আক্রমণ (স্রেফ আগ্রাসন আর বলা যায় না), তার ইতিহাসটা ঠিক কোন্‌ পথে চলেছে, সেটা দেখবার, বোঝবার বা জানবার চেষ্টা করা। এই ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি এইজন্যে আরো বেশি ক’রে বোঝা দরকার কারণ যদি আমরা তুলনামূলক সাহিত্যের পঠনপাঠন-পদ্ধতির মধ্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ‘পড়তে’ চাই, এবং বিশেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যেখানে বাংলাদেশের সাহিত্য এরিয়া স্টাডিজ-এর একটি অন্যতম বিষয়, তাহলে এই ইতিহাসটিকে উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আর আমাদের সমসময় এই ইতিহাসের প্রবহমানতার একটি অত্যন্ত বিশিষ্ট ক্ষণ, মোমেন্ট, কারণ ধর্মবিশ্বাসকে যদি একটি বর্ণালীর মতো মনে করি, তাহলে তার এক প্রান্তে থাকে বিদ্বেষ-আশ্রয়ী অসহিষ্ণু মৌলবাদ, এবং অপর প্রান্তে থাকে মিলনসন্ধানী বৈচিত্র্যসহিষ্ণু উদারতা; আর আমাদের সমসময়ে এই দুই প্রান্তের মধ্যেকার ভারসাম্য একেবারেই নষ্ট হ’তে বসেছে, এর অসহিষ্ণু প্রান্তটি পাল্লায় ভারি হয়ে আমাদের উপমহাদেশের স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রা ধূলিসাৎ করেছে—অন্য কোনো বিষয়ে নজর দেবার আর জো নেই অর্থনৈতিক উন্নতি, সাংস্কৃতিক বিকাশ অথবা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি—যে বিষয়ই হোক না কেন, সবকিছুকেই মৌলবাদ ও মৌলবাদী রাজনীতি আচ্ছন্ন ক’রে রাখতে সফল হচ্ছে। সেই নঞর্থক তাৎপর্যেই আমাদের সমকাল এই নৈরাশ্যজনক ইতিহাসের একটি বিশিষ্ট ক্ষণ।

কোনো একটি সংস্কৃতির যে দিকটি আমার পছন্দ নয়, তাকে ঢেকে দেবো, একে বলা যায় সেন্সরশিপ, চলতি ভাষায় কাঁচি চালানো। যদিও এই প্রবণতা পৃথিবীর সব দেশেই দেখা যায়, কিন্তু এই উপমহাদেশে তা অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে বর্তমান। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে, শিকাগো শহরের পুলিশ বিভাগ থেকে আদেশনামা জারি করে সে শহরের একটি বিপণি হ’তে ফরাসি চিত্রকর পল শাবা’র আঁকা একটি সাড়া জাগানো ছবি “Matinee de Septembre” (বাংলা অনুবাদে দাঁড়ায় “সেপ্টেম্বরের সকাল”) হ’তে অনুপ্রাণিত একটি ফোটোগ্রাফ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। পুলিশ বিভাগের অনুযোগঃ সেই ফোটোগ্রাফের নগ্নতা ‘public morality’-র পক্ষে অস্বাস্থ্যকর। এ প্রসঙ্গে সে সময়কার খ্যাতনামা আমেরিকান শিল্পসমালোচক জেমস উইলিয়ম প্যাটিসন বলেছিলেনঃ
One question is uppermost in our minds; are the various men who move against the picture embarrassed by any rumours of their own misdeeds? Are they entirely pure? Are they doing this work because their office demands this line of activity, or because they feel in their hearts the necessity for it? Far be it from me to make accusation; but there are disturbing rumours afloat. Are we to trust art censorship to any but the most unsullied souls?” (Pattison 1913:243)

সেন্সরশিপের প্রতি তীব্র ঘৃণায় প্যাটিসন ব্যক্ত করেন সেন্সরশিপের প্রবণতাকে সমালোচনা করতেই তাঁর বিতৃষ্ণা জাগে, তাঁর রুচিবোধ আহত হয়। তিনি বলছেনঃ

Probably it were well not to dig too deep, seeking the mire; but this performance already stinks.” (Pattison 1913:243)

প্যাটিসনের মতোই আমাদের বিতৃষ্ণা জাগে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে, যা কিনা কিছু মানুষের ভাবনা-চিন্তাশক্তির সম্পূর্ণ অনুপস্থিতির ফসল। অথচ এই উপমহাদেশের দুর্ভাগ্য এটাই যে আমরা বারবার বাধ্য হই এই আলোচনার কাদা ঘাঁটতে, তা না করে অন্তত আমাদের দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের উপায় নেই। এই সেন্সরশিপ গত তিন দশকে বিধ্বংসী আকার নিয়েছে, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বাংলাদেশে ব্লগ ও ব্লগার দুইই মুছছে, ভারতে সমালোচক মানুষের চিহ্ন মুছছে, পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিয়া প্রার্থনাগৃহ মুছছে

যে দুটি ঘটনার কথা ব’লে লেখা আরম্ভ করেছিলাম, সময়ের বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যেকার মিলটাকে অস্বীকার করবার উপায় নেই, উপায় নেই এই ঘটনাদুটির মধ্যে নিশ্চিতভাবে ঘটে যাওয়া আরও সহস্র ঘটনার সাথে এদের চরিত্রগত যোগসূত্রকে উপেক্ষা করার। ধর্মীয় বিশ্বাস-মতাদর্শ আর যুক্তিবাদের মধ্যে সামঞ্জস্য-চেষ্টা ও আপাত-বিরোধিতা থেকে নিয়মতান্ত্রিক আনুগত্য আর বাঁধনছাড়া স্বেচ্ছাচারিতার চরম বিরোধে উত্তরণের মাধ্যমে এই ঘটনাবলীর চারিত্রিক বিবর্তন সবচেয়ে স্পষ্ট করে চোখে পড়ে—এই হচ্ছে আমাদের বক্তব্য। আর এই বিবর্তনে অনুঘটকের কাজ করেছে ক্ষমতা কায়েম করার রাজনীতি। এই ইতিহাসের একেবারে গোড়ার দিকে, শিখা পত্রিকায় কাজী আব্দুল ওদুদের লেখা থেকে জানতে পারি যে মুসলিম সাহিত্য সমাজ তাঁদের মুখপত্রে “বাংলার মুসল্মান সমাজে, এ পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য সাহিত্যের উদ্‌গম হয় নাই” ব’লে আক্ষেপ করছেন। সে প্রসঙ্গে এমন অভাবের কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে তাঁরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন, তা হ’লঃ

“...বাংলার মুসলমানের জীবনায়োজন মারাত্মক ত্রুটিতে পরিপূর্ণ যাতে করে মনুষ্যত্বের পূর্ণাঙ্গ পর্যাপ্ত বিকাশই সেখানে সম্ভবপর হচ্ছে না,—সাহিত্য-সৃষ্টির কথা সেখানে ভাবা যায় কি করে?

এ সম্পর্কে নানা গুরুতর কথার সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। বলা যেতে পারে, সে সমস্তের কেন্দ্রগত কথা এই—ইসলাম কীভাবে মানুষের জন্য কল্যাণপ্রসূ হবে সেই কথাটাই হয়তো আগাগোড়া আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।”

এই অবধি পড়বার পর মনে হতে পারে ধর্মবিশ্বাসের ওপরেই যেন সমস্ত দায় চাপিয়ে দায় চাপিয়ে দেওয়া হ’ল। কিন্তু না, ধর্মের সমালোচনা আর ধর্মকে একেবারে খারিজ করার মধ্যে কাজী আব্দুল ওদুদ পার্থক্য টেনেছেনঃ

“স্পষ্টভাবেই আমাদের সামনে গ্রহণীয়রূপে বিধৃত ইসলাম নারীর অবরোধে সমর্থন করেছে, সুদের আদান-প্রদানের উপর অভিসম্পাত জানিয়েছে, ললিতকলা চর্চায় আপত্তি তুলেছে, আর চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের দৃঢ়কণ্ঠে বলে দিয়েছে, তোমাদের সমস্ত চিন্তা সব সময়ে যেন সীমাবদ্ধ থাকে কোরআন ও হাদিসের চিন্তার দ্বারা। এই সমস্ত কথাই আমাদের নতুন করে ভেবে দেখতে হবে, ভেবে দেখতে হবে, মুসলমান সমাজের মানুষের কর্ম ও চিন্তার স্বাধীনতায় এইভাবে যে অনেকখানি নতুন রকমের প্রতিবন্ধকতা উপস্থিত করা হয়েছে এতে করে কি সত্যকার কল্যাণ লাভ হয়েছে—এই সমস্ত ব্যবস্থার পিছনে যে সাধু উদ্দেশ্য আছে এ কথা বুঝতে পারা কষ্টসাধ্য নয়। সংযম ও পবিত্রতা, পরিশ্রম ও করুন প্রাণতা,  এবং সুন্দর ও মহনীয়ের প্রতি নিবিড় শ্রদ্ধা—এ সমস্তের কথা যাঁরা মানুষকে বলতে চেয়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু আমাদের নতুন করে ভেবে দেখবার প্রয়োজন এই জন্য যে, সংযম ও পবিত্রতাকে নারীর অবরোধের দ্বারা, পরিশ্রম ও করুন প্রাণতাকে সুদের আদান-প্রদান নিষেধের দ্বারা, ও সুন্দর মহনীয়ের প্রতি শ্রদ্ধাকে মানুষের বুদ্ধি শৃঙ্খলিত করার দ্বারা সম্ভবপর করে তুলতে প্রয়াস পেলে অসম্ভব কিছুর প্রতি হাত বাড়ানো হয় কিনা, অন্যকথায়, তাতে করে মানব প্রকৃতির উপর অত্যাচার করা হয় কিনা, যার জন্য সমস্ত উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।” (আহমেদ ২০১৬:৩৪)

অর্থাৎ পরিষ্কারভাবেই ধর্ম আর যুক্তি-কে পরস্পরবিরোধী দুটি বস্তু হিসেবে দেখা থেকে কাজী আব্দুল ওদুদ তথা মুসলিম সাহিত্য সমাজ বিরত হচ্ছেন। উপরে উদ্ধৃত বয়ানে বিশেষ ক’রে যে শব্দটির উপস্থিতির প্রতি আমি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, সেটি হচ্ছে ‘শ্রদ্ধা’ যে সমাজে দাঁড়িয়ে ওদুদ আত্মসমালোচনা করছেন, নানান দোষত্রুটি ও মানবপ্রকৃতির অবমাননা সত্ত্বেও যে সেই সমাজের বুনিয়াদের সৎ অভিপ্রায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা টলে যায়নি, সেই কথাটি মুসলিম সাহিত্য সমাজের আন্দোলনের গঠনমূলক চরিত্রের দিকে বিশেষভাবে আলোকপাত করে। এঁরা ভাঙতে আসেননি, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন তাকেই আরও ভালো ক’রে গড়তে চেয়েছেন।

তাঁর সমাজে ললিতকলার চর্চায় আপত্তি তোলার বিষয়টি ওদুদ উল্লেখ করেছেন জোরের সঙ্গে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার কথা, অথবা এরকম আরো অনেকগুলো ঘটনা যা দেশভাগের আগে পরে বাঙালি ভূখণ্ডে ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে, জানতে পারলে আজ ওদুদ নিশ্চয়ই প্যাটিসনের মতোই বিতৃষ্ণা অনুভব করতেন।      

তুলনা টানতে হলে কোনো একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হয়। আর নিজে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, শুরু করবার জন্য তার চাইতে ভাল একটা জায়গা আর কীইবা হতে পারে? তাই আমাদের ভাষা, যা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার ভূগোল-ইতিহাসের মতো খুব বড়ো একটা মিলের জায়গা, সেখান থেকেই তুলনার এই যাত্রার উদ্বোধন হোক। পড়ে দেখি, ভাষা কেমনভাবে আঘাত সহ্য করছে, সে আঘাতে মুচড়ে যাচ্ছে কিনা, পাল্টা মার দেবার জন্য উদ্যত হয়ে উঠছে কিনা, নাকি বিস্ময়মেশানো দুঃখের তাড়নায় ক্রমে নীরব অথবা আরো বেশি সাঙ্কেতিক হয়ে যাচ্ছে। পড়ে দেখি, সে ভাষায় কি করে একইসঙ্গে লেখা হচ্ছে প্রেমের গান আর খুন করার ডাক। জানার চেষ্টা করি, ঠিক কোন কোন আর্থসামাজিক কারণ ভাষার বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছে। বিদেশি অর্থ? ভোগবাদের দিকে মধ্যবিত্ত সমাজের ঝোঁক ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতে তার প্রতিক্রিয়া? অনুন্নয়ন? জেনে নিই ঠিক কীভাবে সন্দেহ বাড়ছে দুদেশে, একে অপরের প্রতি। তাতে সরকারগুলির ভূমিকা কতটা, আর কতটা দায়িত্ব দুদেশের নাগরিকদের। তুলনা চলুক। তুলনার জন্য দু’দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি, যারা বরাবর এই বিভক্ত অথচ মিলনকামী বাঙালী ভূখণ্ডের মুক্তচিন্তার মন্দির হিসেবে, কল্যাণমুখী বিদ্যার মক্কা হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করে এসেছে, তারা তাদের উদ্যম আরও জোরদার ক’রে তুলুক। আর আমরা, যারা তুলনা করছি, তারা প্রতিনিয়ত আরও নত হই, আরও বেশি ক’রে নম্র হয়ে যেন তুলনা করতে বসি; তুলনা যেন আমাদের মধ্যে কে বড় আর কে ছোটো সেই ক্ষুদ্র বিচারের জরিয়া হয়ে না রয়ে যায়।              
     


ঋণস্বীকারঃ

আহমেদ, বুলবুল সম্পাদিত অনির্বাণ সেই অগ্নিশিখা.  কলকাতাঃ ছোঁয়া, ২০১৬. মুদ্রিত।   


Pattison, James William. “Public Censorship of Art.” Fine Arts Journal April 1913: 243-246. Print.            

Vengeance

Now I’m more than a quarter of A century old, And I often think I’ve wasted All my gold; Wish I had got a different, some Other ...